পহেলা জানুয়ারী ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন বৃটিশ-ভারতে শিক্ষা ও সংস্কৃতির অনগ্রসরতার যুগে এক মহান যুগসন্ধিক্ষণে উপমহাদেশের অন্যতম সাধক ও বুজর্গ পীর হযরত শাহ্ আবদুল্লা’র পুণ্যভূমি প্রতাপগঞ্জ মিঞা বাড়ির দিঘীর উত্তরপাড়ে (বর্তমান ঈদগাহ ময়দান) এই প্রতিষ্ঠানটির শুভ সূচনা হয়। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ১৯৩৪ইং থেকে ১৯৪২ইং পর্যন্ত এটি তার জন্মস্থানে অবস্থান করেছিলো। অতপর ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘সাদর ঘর’ (বর্তমান রামকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পাকা মহাসড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে) স্থানে স্থানান্তরিত হয়ে ১৯৫২ইং পর্যন্ত অবস্থান করে। সর্বশেষ ১৯৫২ইং সনে সময়ের চাহিদা ও যুগের প্রয়োজনে এটি দেওপাড়া মৌজায় প্রসিদ্ধ চন্দ্রগঞ্জ বাজারে চূড়ান্তভাবে স্থানান্তরিত হয়। প্রতষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়ে দেশ তথা মানব সমাজ পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

১৯৩৪ইং সনে তৎকালীন বৃটিশ-ভারতে রেনেসাঁ আন্দোলনের যুগে পীর বংশীয় প্রতাপগঞ্জ মিয়া বাড়ির কীর্তিমান পুরুষ এবং বৃটিশ আমলে নোয়াখালী জিলা স্কুল ও চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুলের প্রাক্তন সুপারেন্টডেন্ট, ইসলামমী চিন্তাবিদ, লেখক, কলামনিস্ট ও সাহিত্যিক মৌলভী আবদুল ওয়াহেদ মিঞা সাহেবের প্রচেষ্টায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানিক অনুমোদন লাভ করে।

Mowlabi Abdul Wahid

মৌলভী আবদুল ওয়াহেদ মিঞা

শতাব্দীর প্রাচীন বিদ্যাপীঠ হিসেবে ইতিহাসের সু-দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এসেছে এই প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫), ১৯৪৭ এ বৃটিশ থেকে দুটি স্বাধীন জাতী হিসেবে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের  বিভক্তি, ১৯৫২ এর  ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্ট, ১৯৫৬ এর সাংবিধানিক আন্দোলন, ১৯৫৮ সালে আয়ুব মার্শাল বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দপা, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুথান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধসহ যুগান্তকারী ঘটনার রাজস্বাক্ষী অত্র প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়।

মরহুম পীরে কামেল মাওলানা আমিন উল্যা সাহেব অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পর তৎকালীন নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার সাব-ডিভিশনাল অফিসারগণ পর্যায়ক্রমে 1972ইং পর্যন্ত পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অতপর সর্ব জনাব বিসমিল্লাহ মিঞা, আবদুল গফুর মিঞা, ডাঃ নুর মোহাম্মদ চৌধুরী, সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন), জাফর এ চৌধুরী (UNO), আ.ও.ম সফিক উল্যাহ, মৌলভী মোঃ ছাদাত উল্যা, নুর মোহাম্মদ (ভারপ্রাপ্ত), মশিউর রহমান (UNO), হাসান মাসুদ (UNO), মোঃ অহিদুল ইসলাম, মোমিনুর রশিদ আমিন (UNO), আবু ছালেহ মোহম্মদ ফেরদৌস খান (UNO), এ.কে. এম শামছুদ্দিন সাহেব এক/একধিক বার সভাপতির দয়িত্ব পালন করেছিলেন। আলহাজ্ব এম. আলাউদ্দিন 13.12.2010 ইং তারিখ হতে অদ্যাবধি সভাপতি দয়িত্ব পালন করে আসছেন।

প্রয়াত শ্রী নিশি কুমার চক্রবর্ত্তী অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক (1934-1942) ছিলেন। পরবর্তীতে পর্যাক্রমে জনাব নগেন্দ্র কুমার দত্ত, জনাব নবদ্বীপ চন্দ্র মজুমদার (ভারপ্রাপ্ত), জনাব মোঃ আবদুল লতিফ, জনাব মোঃ মহি উদ্দীন, জনাব মোঃ শাহীদুল আলম ও জনাব হোসেন আহমেদ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পহেলা জানুয়ারী ২০১০ থেকে জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

দীর্ঘ পরিক্রমায় দেশজাতিকে অসংখ্য গুণী ও কৃতি শিক্ষার্থী উপহার দিয়েছে অত্র প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা বিস্তার ও সমাজের ইতিবাচক গঠনমূলক পরিবর্তনে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অনন্য। প্রতিষ্ঠানটিতে JSC ও SSC পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও এর সাফল্য অগ্রগণ্য। উপযুক্ত সময়ে দেওয়াল পত্রিকা, সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশসহ জাতীয়ভাবে উদযাপিত দিবস সমূহ- ২১ ফেব্রুয়ারী (শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস), ১৭ মার্চ ( জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস), ২৬ মার্চ (স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস), ১৫ আগস্ট (জাতীয় শোক দিবস) ও ১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস) অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালন করা হয়। সর্বপুরি বিশ্বায়নের প্রতিযোগীতামূলক বাজারে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করার লক্ষ্যে কোমলমতি একটি শিশুকে দেশের সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই অত্র প্রতিষ্ঠানের ব্রত। তাই অত্র প্রতিষ্ঠান গৌরবের মুকুট মাথায় নিয়ে আমরন শিখা অণির্বানের মত প্রজ্জ্বলিত মহিমায় জ্ঞানের আলো বিকিরনে সকলের সহযোগিতা কামনা করি।

মোঃ সিরাজুল ইসলাম,  প্রধান শিক্ষক/2012